১০:০২ এএম | টাঙ্গাইল, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া

ভয়াল ১৩ মে

২৩ বছরেও কাটেনি সেই আতংক

বিশেষ প্রতিনিধি | টাঙ্গাইল২৪.কম | রোববার, ১২ মে ২০১৯ | |
, টাঙ্গাইল :

টর্ণেডোর সেই ভয়াবহ আতঙ্কের কথা এখনো ভুলতে পারেনি টাঙ্গাইলবাসী। ভয়াল ১৩ মে টর্নেডোর ২৩ বৎসর। এ দিনটি টাঙ্গাইলবাসীর জন্য শোক ও আতঙ্কের দিন। এত দিন পেরিয়ে গেলে এখনও কাটেনি সেই আতংক।

২৩ বছর আগে ১৯৯৬ সালে ৫ মিনিট স্থায়ী টর্ণেডোর ধংসাত্মক তান্ডবলীলায় উপজেলার ৫২৩ জন নারী-পুরুষ নিহত এবং ৩০ হাজার আহত হন। ৮৫ হাজার ঘরবাড়ি, ৮৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৭টি মসজিদ এবং ১৪টি মন্দির লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেদিনের কথা মনে হলে এখনও শিউরে উঠে স্থানীয় মানুষ।

সেদিন বিকালে প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড়ে মুহূর্তের মধ্যে জেলার ৫টি উপজেলার ৪০টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে যায়। অনেকের ঘরের চালা উড়ে যাওয়ায় গোলার ধান পর্যন্ত ঝড়ে অদৃশ্য হতে দেখা যায়। অনেক ঘরবাড়ি, গাছপালা, গবাধিপশু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অনেক নারী-পুরুষের পরনের কাপড় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। অনেককে সম্পূর্ণ বস্ত্রহীন ক্ষতবিক্ষত দেহে বিভিন্ন কৃষি জমি, জঙ্গল, পুকুর-ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও নলকূপের উপরের অংশ, দালানের ছাদ পর্যন্ত উঠে যায়।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ১৩ মে ছিল সোমবার। বিকাল ৪টা ১৭ মিনিটের দিকে আকস্মিকভাবে গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়া গ্রাম থেকে শুরু হওয়া প্রায় ৫ মিনিটের স্থায়ী প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় (টর্ণেডো) আলমনগর ইউনিয়ন হয়ে মির্জাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম নুঠুরচর গ্রামে শেষ হয়। মাত্র দুই মিনিটের ছোবলে গোপালপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৬টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে যায়, নিহত হন ১০৪ জন। এছাড়া চার হাজারেরও বেশি গ্রামবাসী আহত হন। ঝড়ে ২০০ একর বোরো জমির পাকা ধান নষ্ট হয়ে যায়। ১০ হাজার গৃহপালিত পশু-পাখি মারা যায়। 

ওই দিনই বিকাল সোয়া ৫টার দিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা রামপুর এবং কুকরাইল গ্রামে হানা দেয় টর্ণেডো। রামপুর ও কুকরাইল গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় ৫ মিনিটের প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড়ে ওই দুই গ্রামের একই পরিবারের ৭ জন সহ ১০৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশু নিহত এবং চার শতাধিক মানুষ আহত হয়। রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে গণকবরে একত্রে দাফন করা হয় ৭৭ জনকে।

বাসাইলের মিরিকপুরে ধান কাটার মৌসুম থাকায় উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার ধানকাটা শ্রমিক জড়ো হয়েছিল এ অঞ্চলে। ঝড় থেকে রক্ষা পেতে মিরিকপুর-সৈদামপুরের ধানের মাঠের আতঙ্কগ্রস্ত বহু শ্রমিক মিরিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দালানে আশ্রয় নিয়েছিল। সেদিন বিকাল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে উত্তর দিক থেকে ধেয়ে আসা প্রায় ৫ মিনিটের টর্ণেডোর ছোঁবলে দালান বিধ্বস্ত হওয়ায় তারা সেখানেই চাপা পড়ে মারা যায়। গ্রামের বহু লোক নিখোঁজ হয়। পরদিন তাদের মৃতদেহের খোঁজ মেলে পার্শ্ববর্তী নদী, পুকুর, খাল ও বিলে। 

মৃত মানুষ, গবাদিপশু ও মাছের দুর্গন্ধে বাসাইলের বাতাস সেদিন ভারি হয়ে গিয়েছিল। মিরিকপুর ছাড়াও উপজেলার বর্নীকিশোরী, হান্দুলিপাড়া, কলিয়া, কাউলজানী, খাটরা, ফুলকী, বাদিয়াজান, সুন্না গ্রামের অংশবিশেষ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়। বর্নীকিশোরী উত্তরপাড়ার একই পরিবারের মৃতদেহ প্রায় আধমাইল দূরের বিল থেকে উদ্ধার করা হয়। অনেক পরিবারের কেউই জীবিত ছিল না। 

বাসাইল উপজেলা হাসপাতালসহ পার্শ্ববর্তী হাসপাতালগুলো ছিন্নভিন্ন আহত লোকজনে ভরে গিয়েছিল। উপজেলায় টর্ণেডো আক্রান্ত এলাকায় একাধিক গণকবর সৃষ্টি হয়েছিল। ঘুর্ণিঝড়ে বাসাইল উপজেলার ১৭ গ্রামের ৫ হাজার পরিবারের প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণরুপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫-৬টি কাঁচাবাজার, প্রায় ২ হাজার গবাদিপশু, ১০ হাজার হাঁস-মুরগি, সাড়ে ৩০০ টিউবওয়েল ও ২৫ হাজার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখা ২৩৭ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখা ছিল আরো অনেক বেশি। আজো কালো মেঘের আনাগোনা দেখলে বাসাইলের মানুষের মনে ভেসে ওঠে মিরিকপুরের সেই ঝড়ের স্মৃতি।

জেলার ৪০টি গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সেদিনের টর্ণেডোর আঘাতে মারা যায় অসংখ্য গবাদি পশু, দুমরে-মুচরে যায় ঘরবাড়ি, দিগন্তব্যাপী ফসলের মাঠ বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়। টর্ণেডোয় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের স্মরণ করতে স্ব স্ব এলাকায় স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে প্রতিবছর দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হলেও এ বছর রমজান মাস হওয়ায় মসজিদে মসজিদে ইফতারসহ বিশেষ দোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

এ বছরও বাসাইলের মিরিকপুর, কালিহাতীর রামপুর, গোপালপুরের আলমনগর গ্রামে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন...

নাগরপুরে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার দিলেন তারানা হালিম বঙ্গবন্ধু সেতুতে একদিনে ৩কোটি টাকার টোল আদায় ''মানুষের কল্যাণে মানুষ'' ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঈদ সামগ্র ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১৭ কিলোমিটার এলাকা ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বা ফুড টেকনো ঈদের বাজার নিয়ে এবার বাড়ি ফিরবে না মেহেদী ৩২ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার পরিবহ পীর শাহজামান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ইফতার মাহফ দুঃস্থদের মাঝে টাঙ্গাইল মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ এর ঈদ ঈদের ছুটিতে মাভাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে বেড়েছে চোরের উপদ্রব জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা টাঙ্গাইল জেলা ইউনিটের ইফতার ও দো মির্জাপুরে অবৈধভাবে বালুকাটায় ৪ জনের জেল খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মির্জাপুরে দোয়া ও ইফতার ম ঈদে এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারে যানজটের আশঙ কুরিয়ার সার্ভিসের কাউন্টার থেকে ১৬ বস্তা নকল সিগারেট জব

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি