১১:২১ এএম | টাঙ্গাইল, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া

ঈদে রমণীদের পছন্দ টাঙ্গাইলের জামদানি

বিশেষ প্রতিনিধি | টাঙ্গাইল২৪.কম | বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০১৬ | | ৭৯৯
, টাঙ্গাইল :

‘নদী চর খাল বিল গজারির বন, টাঙ্গাইল শাড়ি তার গরবের ধন’- এ প্রবাদেই পরিচয় মেলে টাঙ্গাইলের, টাঙ্গাইল শাড়ির। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদে রমণীদের মন জয় করতে নতুন ডিজাইনের শাড়ি বাজারে এনেছেন ব্যবসায়ীরা।

তাঁত মালিক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, এবারের ঈদে টাঙ্গাইলের জামদানি শাড়ি রমণীদের প্রথম পছন্দ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ।

জানা যায়, টাঙ্গাইল শাড়ির বৈচিত্র্যতায় এবারের ঈদে বিপনন করা জামদানি শাড়ি রমণীদের নজর কেড়েছে। আধুনিকতার স্পর্শ আর মনকাড়া রঙ, কারুকাজে বৈচিত্র্য ও তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় এ শাড়ি রমণীদের প্রথম পছন্দের তালিকায় স্থান পেয়েছে। চাহিদার শীর্ষে অবস্থান করায় উদ্যোক্তরাও জামদানি উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন।

ঈদকে ঘিরে দেশের প্রায় প্রতিটি শপিং মল, মার্কেট ও বিপনী বিতানে লেগেছে টাঙ্গাইলের জামদানি শাড়ি কেনা-বেচার ধুম। ফলে মহাজনদের সরবরাহের চাহিদা পূরণে তাঁতের জামদানি শাড়ি তৈরিতে তাঁত শিল্পীদের চলছে বিরামহীন প্রতিযোগিতা। সরগরম হয়ে উঠেছে তাঁত সমৃদ্ধ শিল্পাঞ্চল।

প্রাচীন কাল থেকে টাঙ্গাইলের দক্ষ কারিগররা বংশ পরম্পরায় তৈরি করছেন বিশেষ ধরণের শাড়ি। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাং- এর ভ্রমণ কাহিনীতে টাঙ্গাইলের বস্ত্র শিল্প অর্থাৎ তাঁত শিল্পের উল্লেখ রয়েছে।

বর্তমানে এ তাঁতের শাড়ির জন্যই টাঙ্গাইলের সুনাম ও পরিচিতি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য আর লোক-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যে টাঙ্গাইল জেলার অবস্থান উঁচুতে নেয়ার কান্ডারি হিসেবে সবচেয়ে বেশি দাবি রাখে টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধুলটিয়া, বাজিতপুর, সুরুজ, বার্থা, বামনকুশিয়া, ঘারিন্দা, গোসাইজোয়াইর, তারুটিয়া, এনায়েতপুর, বেলতা, গড়াসিন, সন্তোষ, কাগমারী, কালিহাতী উপজেলার বল্লা, রামপুর, ছাতিহাটি, আইসরা, রতনগঞ্জ, মমিননগর, কোকডহড়া, তেজপুর, কাজীবাড়ি, দত্তগ্রাম, ধানগড়া, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চন্ডি, নলুয়া, দেওজান, নলশোঁধা, বিষ্ণুপুরে তৈরি হচ্ছে এ শাড়ি।

এছাড়া গোপালপুর, বাসাইল, সখীপুর, নাগরপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার কিছু কিছু গ্রামে তাঁত শিল্প রয়েছে।

তাঁত শ্রমিকরা জানায়, টাঙ্গাইলের তাঁতের জামদানি শাড়ি তৈরি করতে হাতের কাজ করা হয় খুব দরদ দিয়ে, গভীর মনোযোগের সাথে অত্যন্ত সুক্ষè ও সুদৃশ্য ভাবে। তাঁত সমৃদ্ধ এলাকায় পুরুষরা তাঁতে কাপড় বুনে, আর চরকায় সুতা কাটা, তানা ও পাড়ির কাজে সহযোগিতা করে পরিবারের মহিলারা।

তাঁতিরা মনের রঙ মিশিয়ে শাড়ির জমিনে শৈল্পিকতা ঢেলে দেন। তাঁত মেশিনের মাধ্যমে নানা ডিজাইন ও নকশা তৈরি করেন। এ নকশা, বুনন, ও রঙ-এর ক্ষেত্রে রয়েছে অতুলনীয় বিষয় বৈচিত্র্য।

ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, সৌদিআরবসহ ভারতে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির রয়েছে ব্যাপক কদর। অন্যান্য দেশের শাড়ি ১০ হাত থেকে সর্বোচ্চ ১১ হাত মাপে তৈরি হয়, আর টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি তৈরি হয় ১৪ হাত মাপে।

এ শাড়ি নরম মোলায়েম এবং পড়তে আরাম ও টেকসই। এ ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সময় ও চাহিদার সাথে তাল মিলিয়েই দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে টাঙ্গাইল শাড়ির আকর্ষণ ও নকশার সাদৃশ্যতা।

এ শিল্পের শ্রমিকরা জানায়, অনেক কষ্ট সহ্য করতে পারলে একদিনে সাধারণ মানের একটি জামদানি শাড়ি তৈরি করা যায়। অন্যথায় দুই দিন সময় লাগে। আবার প্রকার ভেদে কোন জামদানি শাড়ি তৈরি করতে ৩-৪ দিন থেকে মাসাধিক কালও লেগে যায়। সবই নির্ভর করে ডিজাইনের উপর। ডিজাইন অনুপাতে তারা শাড়ি প্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন।

তাঁত মালিক বা উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রঙ-বেরঙ-এর রেয়ন, জরি ও উন্নত মানের মোলায়েম চিকন সুতার মাধ্যমে তারা টাঙ্গাইলের জামদানি শাড়ি তৈরি করে থাকেন।

এবার ঈদে রমণীদের নজর কাড়া টাঙ্গাইলের জামদানি শাড়িটি উৎপাদন করা হয়েছে, পাথরাইলের বিশিষ্ট শাড়ী ব্যবসায়ী যজ্ঞেষর অ্যান্ড কোং-এর ফ্যাক্টরিতে।

যজ্ঞেষর অ্যান্ড কোং-এর স্বত্তাধিকারী রঘুনাথ বসাকের ভাগিনা প্রদীপ সরকার জানান, তাদের উৎপাদিত মসলিন সিল্ক জামদানি শাড়ি তৈরি করতে ১ মাস ২০ দিনের মতো সময় লেগেছে। ৯-১০টি তাঁতে রেশম ও রেয়ন বুটিকে তৈরি মসলিন সিল্ক জামদানির বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ১৬ হাজার টাকা, বিক্রিও হচ্ছে যথেচ্ছ।

তাঁত সমৃদ্ধ এলাকার গ্রামগুলোতে দিন-রাত মাকুর খট খট শব্দ এলাকায় মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। তাঁতিদের হাতে বিশেষভাবে তৈরি এ শাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাজিতপুর ও করটিয়ার হাট থেকে পাইকারি ক্রেতাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। এছাড়াও সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নানা নামের জামদানি শাড়ি বাজারে এনেছে উদ্যোক্তারা।

জেলা শহরের সমবায়, খান প্লাজা, হিরা সুপার মার্কেট সহ বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, গতবারের তুলনায় এবার দাম কিছুটা কম, অত্যাধুনিক বাহারি ডিজাইনের পছন্দের জামদানি শাড়ি ক্রয় করতে পেরে রমণীরা বেজায় খুশি।

বিক্রেতারা জানান, ডিজাইন, রঙ, হাতের কাজ ও সুতার গুনাগুন ভেদে ৭০০ টাকা থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে নানা নামীয় জামদানি শাড়ি। সাধারণত পাঁচ প্রকার জামদানি রয়েছে দোকানগুলোতে ঢেউ, আম, রহিতন, তারা, ডাবল আম, ডেমরা। এ শাড়ি দৈর্ঘ্যে ১২ হাত, ব্লাউজ ২ হাত ও প্রস্থ ৪৬ ইঞ্চি।

জামদানি শাড়ি তৈরি করার জন্য ৮০/১, ৮২/১, ৮৪/১ ও ১০০/১, ১০০/২ কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এর মধ্যে ৮২/১ ও ৮৪/১ কাউন্টের সুতা বেশি ব্যবহার করা হয়। আর এবার ঈদে সাধারণ জামদানি শাড়ি বিক্রি করে উদ্যোক্তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী খ্যাত দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলের বিশিষ্ট শাড়ি ব্যবসায়ী ও তাঁতি সংগঠক মেসার্স যজ্ঞেষর এন্ড কোং-এর স্বত্তাধিকারী রঘুনাথ বসাক জানান, ২০০১ সালে এ অঞ্চলে ৭৫ হাজার ৪৬০টি তাঁত ছিল। এরমধ্যে পিটলুম ছিল ২৭ হাজার ৬৮২, চিত্তরঞ্জন ৪৭ হাজার ৩৫৩ ও পাওয়ার লুম ছিল ৪২৫টি। এর সংখ্যা ২০১৪ সালে পিটলুম ৮ হাজার, চিত্তরঞ্জন ৫১ হাজার ও পাওয়ার লুম দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১০০তে। গত ১০ বছরে প্রায় ৬০% তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রমিক মজুরি ও মালামালের দাম বৃদ্ধির পরও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কাপড়ে বাজার সয়লাব ও বাজার দখলমুক্ত রাখতে ক্রেতার চাহিদা ও মূল্যের প্রতি দৃষ্টি রেখে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

তার উৎপাদিত ও চাহিদাপূর্ণ বিশেষ জামদানি শাড়ির মধ্যে রয়েছে, ফুল সিল্ক যার পাইকারী মূল্যই প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এ বছর ১৬ হাজার টাকার রেশম ও রেয়ন বুটিকে তৈরি মসলিন সিল্ক জামদানির বিক্রি ঈর্ষান্বিত পর্যায়ের।

এছাড়াও ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মার্সচাইট কটন শাড়ির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। ঈদ উপলক্ষে তার উৎপাদিত শাড়ি রয়েছে ১৬ লাখ পিস, ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ শাড়ি বিক্রি হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন...

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে মারধরের হু সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আহত এসআই : গ্রেফতার ১৬ মির্জাপুরে গরীব ও দুস্থ মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ মির্জাপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ এক পরিবারের ৪জন আহ মির্জাপুরের বাঁশতৈলে ৮টি অবৈধ কয়লার চুল্লি ধ্বংস ধনবাড়ীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত চলন্ত ট্রেনের ছা‌দ থে‌কে যাত্রীর মর‌দেহ উদ্ধার নাগরপুরে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার দিলেন তারানা হালিম বঙ্গবন্ধু সেতুতে একদিনে ৩কোটি টাকার টোল আদায় ''মানুষের কল্যাণে মানুষ'' ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঈদ সামগ্র ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১৭ কিলোমিটার এলাকা ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বা ফুড টেকনো ঈদের বাজার নিয়ে এবার বাড়ি ফিরবে না মেহেদী ৩২ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার পরিবহ পীর শাহজামান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ইফতার মাহফ

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি