মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সভাপতিমÐলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আর এবারে আলোচনায় এসেছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার খবরে।
আগামীকাল রোববার ২৫ নভেম্বর লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতীতে এসে নির্বাচনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেবেন বলেও তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে লতিফ সিদ্দিকীর অনুসারী মোশারফ হোসেন সিদ্দিকী ঝিন্টু বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী নির্বাচন করবেন এই খবরে কালিহাতীতে বইছে আনন্দের জোয়ার। কালিহাতীর আওয়ামী লীগ ও উন্নয়ন লতিফ সিদ্দিকী নিজ হাতে গড়েছেন। আগামীকাল ২৫ নভেম্বর রোববার নেতা কালিহাতীতে এসে নির্বাচনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘কালিহাতী উপজেলার প্রতিটি এলাকায় লতিফ সিদ্দিকীর গণভিত্তি রয়েছে। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা–কর্মীই তাকে চান। তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন।’
এ ব্যাপারে কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘এখন সর্বত্র লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দলের একটি অংশ তার পক্ষে ।’
নির্বাচন সম্পর্কে লতিফ সিদ্দিকী মোবাইল ফোনে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আমি আদর্শিত। কালিহাতীর মানুষের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। মানুষের ভালবাসা ও চাওয়া থেকেই স্বতন্ত্র নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলেও প্রকৃতপক্ষে দল তাকে ছাড়েনি এবং তিনিও দলকে ছাড়েননি। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর রাজনৈকি দৃশ্যপট থেকে আড়ালে থাকলেও তার ভক্তকূল ও জনগণ এখনো তার সাথেই আছেন বলে তার দাবি। এমন বক্তব্য তিনি টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন।
লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতী থেকে ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করেন। ২০০৮ সালের বিজয়ী হওয়ার পর মন্ত্রিত্ব পান তিনি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় এমপি নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হজ¦, মহানবী (সা.) ও তাবলিগ জামায়াত এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটূক্তি করে ফেঁসে যান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। দেশে ও দেশের বাইরে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও ইসলামিক সংগঠনগুলো লতিফ সিদ্দিকীর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে মোট ২২টি মামলা হয়। এরমধ্যে ১৭ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরে তিনি দেশে এসে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তিনি কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পান।
পরে দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলনের মুখে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন এবং দল থেকে বহিষ্কার হন।
এরপর ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি তার আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী এমপি নির্বাচিত হন। ওই উপ-নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ঋণ খেলাপির কারণে তার প্রার্থীতা অযোগ্য ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সোহেল হাজারীকেই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে আলোচনা উঠেছে লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগে ফেরানো হতে পারে।
এবার এ আসন থেকে বর্তমান এমপি ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবু নাসের, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী এবং জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সোলায়মান হাসান মনোনয়নপত্র কিনেছেন।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...