ইসরাত সাদমীন, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। যোগদান করেছিলেন দশ মাস পূর্বে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, মাদক নির্মূল, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মা ও অভিভাবক সমাবেশসহ একের পর এক নানা ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে তিনি শুধু মির্জাপুর নয় টাঙ্গাইল জেলাসহ সারাদেশেই বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। একের পর এক কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে পান লেডি ফাটাকেস্ট খেতাব।
ব্যতিক্রম উদ্যেগের কারণেই জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষার মানউন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখায় এ স্বীকৃতি দিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন বাছাই কমিটি।
শিক্ষা নগরী খ্যাত জেলা টাঙ্গাইল। একাধিক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দেশের নাম করা অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই জেলায়। জেলায় শিক্ষিত জনসংখ্যার হারও অনেক বেশি।
আর সে জেলাতেই শিক্ষা খাতে অবদান রাখায় এমন স্বীকৃতি পাওয়ার পর কথা বলেন টাঙ্গাইলের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল টাঙ্গাইল২৪.কম এর বিশেষ প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন এর সাথে। এসময় তিনি তার কর্মকান্ড গুলো তুলে ধরেন।
টাঙ্গাইল২৪.কম : প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে অবদান রাখায় আপনি জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হয়েছেন। আপনার অনুভূতি কেমন?
ইউএনও ইসরাত সাদমীন : যে কোন ভাল কাজে শ্রেষ্ঠ হওয়া তো অনেক খুশির বিষয়। সম্ভবত সে কারণে আমিও খুবই খুশি।
টাঙ্গাইল২৪.কম : জেলায় ১২ জন ইউএনও রয়েছে। কিন্তু এমন কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন যে কারণে আপনাকে শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বলে আপনি মনে করেন।
ইউএনও ইসরাত সাদমীন : শুধু প্রাথমিক শিক্ষা নয়, যোগদানের পর থেকেই বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, মাদক নির্মূল, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মা সমাবেশসহ বিভিন্ন কাজ আমি প্রতিনিয়ত করে থাকি। তবে প্রথম থেকেই আমি প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে বেশী জোর দিয়েছিলাম। কারণ প্রাথমিক শিক্ষা হলো আমাদের ভিত্তি। ভিত্তি মজবুত না হলে ভবন যেমন দুর্বল হয়। তেমনি মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমাদের ভিত্তিও মজবুত হবে না।
গত দশ মাস আগে এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে সরকারি সহযোগিতা ছাড়াও বেসরকারি ও স্থানীয় জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করণের মাধ্যমে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সংস্কারে ভূমিকা রাখতে পেরেছি।
এসময় তিনি তার কর্মকান্ডের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন। যা হুবহু তুলে ধরা হলো-
তরফপুর ইউনিয়নের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিটি উঁচু থাকায় ছোট ছোট বাচ্ছারা উঠতে পারতো না। সেখানে একটি সিঁড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
বিদ্যালয় ও আঙ্গিনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখাতে একযোগে উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিস্কার পরিচ্ছনতা অভিযান চালানো হয়েছে।
সবুজে ঘেরা বিদ্যাঙ্গনে নিঃশ্বাস নিই বিশুদ্ধ অক্সিজেনে প্রতিপাদ্যে একযোগে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপন করা হয়েছে।
এক যোগে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেয়াল পত্রিকা উন্মোচন করা হয়েছে।
স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করণের মধ্যে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন জাতীয় দিবসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করা হয়েছে।
শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে সভার আয়োজনা করা হয়েছে।
প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি শ্রেণির ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীকে অভিনন্দন সনদপত্র দিয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে।
সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলাধূলার সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।
কিছু সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ সংস্কার, সোলার বিতরণ ও ডিজিটাল হাজিরা চালু করা হয়েছে।
“রোদ বৃষ্ঠিতে ভয় নাই সময়মত স্কুলে যাই” শীষক কর্মসূচীর আওতায় দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাতা বিরতণ করা হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে হাতে কলমে পাঠদান শেখানো হয়েছে।
কাব স্কাউটের কার্যক্রম গতিশীল করা।
বাল্যবিয়ে বন্ধে শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে “বাল্য বিবাহ সুন্দর জীবনের অন্তরায়” ও মাদক জীবনকে ধবংস করে” শীষক বিতর্ক প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছে।
বাল্য বিবাহ, জঙ্গিবাদ, মাদক প্রতিরোধে উঠান বৈঠক ও প্রতিটি বিদ্যালয়ে আঙ্গিনায় একটি করে বাগান তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়গুলোতে অভিযোগ বক্স ও মিনি লাইব্রেরী স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিমত্তা উৎসাহ স্মারক প্রদান করা হয়েছে।
কতিপয় বিদ্যালয়ে বেঞ্চ, শেফ, স্কুর ড্রেস সরবরাহ, মিড ডে মিল চালু এবং চালুকৃত মিড ডে মি সচল রাখতে তদারিক করা।
বিদ্যালয় নিয়মিত পরিদর্শন, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে আর্থিক সহায়তা প্রদান, শ্রেণি কক্ষসমুহ সুসজ্জিত করণে উদ্বুদ্ধ করা কতিপয় বিদ্যালয়ে সহায়তা প্রদান।
বিদ্যালয়গুলোতে সততা ষ্টোর চালু করণে উদ্বুদ্ধকরণ ও সহায়তা প্রদান।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের সঙ্গে ই যোগাযোগ চালু করতে ইমেইল আইিড তৈরি নিশ্চিত করণ।
বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে জনসচেতনামূলক গান রচনা এবং সুন্দর হাতের লেখার আয়োজন করা।
প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের লেখনীয় সমন্বয়ে সংকলন প্রকাশ শিক্ষকদের বিষয় ভিত্তিক দক্ষাতা বৃদ্ধিতে কুইজ প্রতিযোগীতার আয়োজন ও নানামুখী প্রশিক্ষণ প্রদান।
বিদ্যালয় আঙ্গিনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে স্থায়ী ডাস্টবিন নির্মাণে উদ্বুদ্ধকরণ।
স্বাস্থ্য রক্ষায় কতিপয় বিদ্যালয়ে সেনিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
ক্ষুদে ডাক্তারদের কার্যক্রম নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে উৎসাহ দেয়া।
শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শনে উদ্বুদ্ধকরণ, শিক্ষকবৃন্দকে সহায়তা, মা অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনা করা।
প্রাক- প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ সু সজ্জিত করণে ভূমিকা রাখা।
টাঙ্গাইল২৪.কম : আপনাকে ধন্যবাদ।
ইউএনও ইসরাত সাদমীন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...