টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর বন এলাকায় চলন্ত বাসে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের তরুণীকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় নিহতের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার মা হাসনা হেনা বেগম মেয়ের জন্য কান্না করতে করতে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। তাকে বুধবার সকালে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
রুপাদের বাড়ির চারিদিকে বন্যার পানি। তারপরও আশপাশের শত শত নারী-পুরুষ ওই বাড়িতে গিয়ে তাদের সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। অপরাধীরা ধরা পড়লেও পুরো গ্রামের মানুষ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন অপরাধীদের।
নিহতের ছোট বোন মাশরুফা আক্তার পপি বলেন, ৩ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে জাকিয়া সুলতানা রুপা ৪র্থ। বাবা মারা যাবার পর অনেক কষ্ট করে বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স শেষ করে ভর্তি হয় ঢাকার আইডিয়াল ল’ কলেজে। পড়াশোনায় মেধাবী রুপার স্বপ্ন ছিলো আইন বিষয়ে পড়ে আরো ভালো কিছু করার। কিন্তু সংসারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সংসারের দেখভালের জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি তারা ২ বোন চাকরি নেয় ময়মনসিংহের ইউনিলিভার কোম্পানীতে।
এদিকে, টাঙ্গাইলে অবস্থানরত রুপা’র বড় ভাই হাফিজুর রহমান আজ বেলা ১২টার দিকে মোবাইলে জানান, লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি দুপুরের মধ্যে সিদ্বান্ত হয়ে যাবে। তারপর আমরা লাশ নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হবো।
মধুপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, দুপুরে পুলিশ হেফাজতে থাকা বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে আদালতে পাঠানো হবে। তারা আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে রাজী হয়েছে। পাশাপাশি লাশ উত্তোলনের জন্য চীফ জুডিশয়াল আদালতে আবেদন দেয়া হয়েছে। সেটিও দুপুরের মধ্যে সিদ্বান্ত হবে। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ মামলায় গ্রেপ্তার ৩ হেলপার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর রাতেই তাদের কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মেয়েটি বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাবার জন্য ছোয়া পরিবহন বাসে রওনা হয়। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌছার পর বাসে থাকা ৭ যাত্রী নেমে যায়। এরপর শুধু রুপাকে নিয়েই বাসটি ময়মনসিংহের দিকে রওনা হয়। পথিমধ্যে কালিহাতি থেকে মধুপুর পর্যন্ত রাস্তায় বাসের স্টাফরা জোরপুর্বক মেয়েটি ধর্ষন করে। পুলিশ হেফাজতে থাকা চালক ও সুপার ভাইজার জিজ্ঞাসাবাদে এবং ৩ হেলপার আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এসব বিষয় স্বীকার করেছে। এ পাঁচজন মিলেই চলন্ত বাসে চার দিন আগে মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছিল।
নিহত রূপা সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের জেলহক প্রমানিকের মেয়ে। ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে পড়ালেখা করার পাশাপাশি একটি কোম্পানির প্রোমশনাল ডিভিশনে কাজ করছিলেন তিনি। তার কর্মস্থল ছিল ময়মনসিংহ জেলা সদরে।
ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে করে শুক্রবার রাতে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন রূপা। চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় বলেন মধ্যে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হয়।
শনিবার লাশ উদ্ধার করে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন ও একটি অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করে পুলিশ।
গণমাধ্যমে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে সোমবার রাতে মধুপুর থানায় গিয়ে ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করে তার পরিবার। পরে রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান ছোঁয়া পরিবহনের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫জনকে গ্রেপ্তার করে। এরা হলো- বাসের চালক ময়মনসিংহের মির্জাপুরের শহিদুল ইসলামের ছেলে হাবিব, সুপারভাইজার একই এলাকার সুলতান আলীর ছেলে সফর আলী ওরফে গেদু, হেলপার কামাল হোসেনের ছেলে আকরাম হোসেন, হেলপার এমদাদুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন ও হেলপার মুক্তাগাছা উপজেলার নন্দীবাড়ির খোরশেদ আলীর ছেলে শামীম হোসেন।
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
নির্মান ও ডিজাইন : মঈনুল ইসলাম, পাওয়ার বাই: জিরোওয়ানবিডি
আপনার মন্তব্য লিখুন...